প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন ভারতীয় রিজার্ভ ব&# - আরবিআই - Reserve Bank of India
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইতিহাস (1981-1997), চতুর্থ খণ্ড
তারিখ: 17/08/2013 প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইতিহাস (1981-1997), চতুর্থ খণ্ড আজ নয়া দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ডঃ মনমোহন সিং, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইতিহাস-এর চতুর্থ খণ্ড উদ্বোধন করেন। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং এ্যাকাডেমিক ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত এই খণ্ড ১৯৮১ থেকে ১৯৯৭-এর ঘটনাবহুল ১৬ বছরের সময়পর্বটির বর্ণনা করেছে। এই খন্ডের মাধ্যমে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের ইতিহাসকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত প্রস্তুত করতে পেরেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ডঃ বিমল জালানের নেতৃত্বে গঠিত একটি উপদেষ্টা সমিতির তত্ত্বাবধানে ২০০৯ সালে এই খণ্ডের কাজ শুরু হয়। কার্যালয়ের নথি, প্রকাশনা এবং এই সময়কালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাজকর্মের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই খণ্ডে প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস রচিত হয়েছে। অংশ ক এবং অংশ খ, দুই অংশে প্রকাশিত এই চতুর্থ খণ্ডটি ভারতের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রিত পর্ব থেকে উদারীকরণের ক্রমিক রূপান্তরণের বর্ণনা দেয় এবং কাঠামোগত ও আর্থিক ক্ষেত্রের সংস্কার বাস্তবায়িত করার প্রক্রিয়াকে তুলে ধরে। ফলে এই খণ্ড ছয়জন গভর্নরের মেয়াদকাল – ডঃ আই.জি.প্যাটেল-এর আংশিক মেয়াদ থেকে শুরু করে, ডঃ মনমোহন সিং, শ্রী এ.ঘোষ, শ্রী আর.এন.মালহোত্রা, শ্রী এস.ভেঙ্কিটারমাননসহ ডঃ সি.রঙ্গরাজন-এর মেয়াদ পর্যন্ত বিস্তৃত। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এই খণ্ড ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫, যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ছিলেন এবং ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ যখন তিনি ভারতের অর্থমন্ত্রী ছিলেন, এই দুই কালপর্বকে অন্তর্ভুক্ত করে। এই উপলক্ষে উপস্থিত বিশিষ্টজনদের স্বাগত জানিয়ে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, ডঃ ডি.সুব্বারাও বলেন যে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইতিহাসের এই চতুর্থ খণ্ডে বর্ণিত কালপর্ব ভারতীয় অর্থনীতির পক্ষে সব থেকে কঠিন পরীক্ষার সময় ছিল। ‘ইতিহাস কি পুনরাবৃত্ত হয়?’, এই প্রশ্ন উত্থাপন করে গভর্নর বলেন, “....অন্ততপক্ষে অর্থনীতি ও আর্থিক বিষয়ে ইতিহাস পুনরাবৃত্ত হয়, এই কারণে নয় যে এটি ইতিহাসের অনিবার্য বৈশিষ্ট্য, বরং এই কারণে যে আমরা ইতিহাস থেকে শিখি না এবং একই ঘটনাকে আবার ঘটার সুযোগ দিই”। তিনি কৌতূহল প্রকাশ করেন যে সাম্প্রতিক কয়েকটি বিতর্ককে ঘিরে, যেমন উন্নয়ন-মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে সমতা রক্ষা, মুদ্রানীতির উপর সরকারি রাজস্বনীতির আধিপত্য ইত্যাদি নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভূমিকা সম্পর্কে ইতিহাস কী রায় দেবে। ব্যাখ্যা করে তিনি জানান যে, “রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে দায়বদ্ধ ছিল, এই কারণে নয় যে তারা উন্নয়নের বিষয়ে আগ্রহী নয় বরং এই কারণেই যে তারা উন্নয়নের বিষয়ে সত্যিই আগ্রহী”। বক্তব্য শেষ করতে গিয়ে তিনি বলেন যে আগামী দিনে মনোনীত-গভর্নর ডঃ রঘুরাম রাজনের সামনে যে কঠিন পরীক্ষা আসবে তা হল “আপনি আপনার অদম্য মেধা, পাণ্ডিত্য এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে কীভাবে একটি জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের রূপ দেবেন যা কীভাবে বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ায় লিপ্ত বিশ্বে বিকাশশীল অর্থনীতির(দেশের) কোনও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সমষ্টিকেন্দ্রিক-অর্থনৈতিক (ম্যাক্রোইকোনমিক) নীতি পরিচালন করবে তার মানদণ্ড তৈরি করবে”। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইতিহাসের চতুর্থ খণ্ডের জন্য গঠিত উপদেষ্টা সমিতি্র সভাপতি ডঃ বিমল জালান সময়মতো এই খণ্ড সম্পূর্ণ করতে পারার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইতিহাসের চতুর্থ খণ্ড একটি এমন সময়কালকে নিয়ে যখন ডঃ মনমোহন সিং মুদ্রানীতি তৈরি করার ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপেক্ষিক স্বাধীন ভূমিকা প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়ে অগ্রণীর ভূমিকা গ্রহণ করেন এবং এটি একটি অদ্ভুত যোগাযোগ যে তিনিই আজ এই খণ্ডের উদ্বোধন করছেন। ডঃ জালান এ কথাও বলেন যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইতিহাস কেবল মাত্র ১০% নিজের ইতিহাস বাকি ৯০% দেশের অর্থনীতির ইতিহাস এবং তাই ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশ নিয়ে গবেষণার পক্ষে এই গ্রন্থ একটি গোপন রত্নভাণ্ডার। তাঁর মন্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তাঁর প্রিয় স্মৃতির উল্লেখ করেন এবং বলেন যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দেশের মুদ্রা ও ঋণনীতি রূপায়ণে মহৎ ভূমিকা পালন করেছে, বিশেষ করে ঋণের দিশা গ্রামীণ এলাকামুখী করার ক্ষেত্রে; তবে তার সর্বোচ্চ অবদান আগামী দিনে প্রত্যাশিত। তিনি ডঃ সুব্বারাও-এর শুভ কামনা করে বলেন যে “অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং দেশের কাজ করেছেন”। অতঃপর তিনি তাঁর উত্তরসূরী ডঃ রঘুরাম রাজন কে হার্দিক স্বাগত জানান এবং বলেন “ইনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। আমি ঐকান্তিকভাবে আশা করি যে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর রূপে তাঁর অধীনে আরও উজ্জ্বল দিন দেখবে”। প্রেক্ষাপট ১৯৩৫ সালে গঠিত ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বিকাশশীল দেশগুলির মধ্যে অন্যতম প্রাচীনতম কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। সূচনাপর্ব থেকে চতুর্থ খণ্ডে বর্ণিত সময়কাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রাপথ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনায় ভরা। ১৯৩০-এর মহা-মন্দা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সমস্যা; ১৯৪৪ সালে ব্রেটন উড ব্যবস্থা লাগু হওয়া (এবং ১৯৭১ সালে তার ব্যর্থ পরিসমাপ্তি), ১৯৭০-এর দশকে তেলের মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা এবং ১৯৮০-র দশকে তৃতীয় বিশ্বের ঋণ সঙ্কট হল বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহের কয়েকটি মাত্র। দেশের অভ্যন্তরে ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি একের পর এক ঘটেছে, যেমন দুটি বিশ্বযুদ্ধের পরিণাম; পরিকল্পনা যুগের সূচনা; ১৯৬৬ সালে টাকার অবমূল্যায়ন; ১৯৬৯ সালে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ; ১৯৯১ সালে বৈদেশিক লেনদেনের হিসেবে (ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট) সঙ্কট এবং ফলশ্রুতিস্বরূপ অর্থনৈতিক সংস্কার যা ভারতীয় অর্থনীতিতে উদারীকরণের এক নতুন যুগের সূচনা করে। এই কঠিন পরীক্ষার সময় ভারতের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত যুগ থেকে রূপান্তরিত হয় ক্রম-উদারীকরণ ও উন্নয়নের পথে। ১৯৮০-র দশককে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয় ক্রম-বর্ধমান রাজস্বনীতির কারণে বাজেট ঘাটতির স্বত মুদ্রায় রূপান্তরণ যা মুদ্রানীতি পরিচালনের কাজকে বাধা দিচ্ছিল। ভারতীয় আর্থিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা; এই ব্যবস্থা উচ্চ ব্যয় এবং অদক্ষতার সমস্যায় ভুগছিল। বৈদেশিক ক্ষেত্রে অবনতি দেখা দিল ১৯৮০-র দ্বিতীয় ভাগে। এই সময়ের নির্ণায়ক ঘটনা ছিল বৈদেশিক লেনদেনে্র হিসেবের (ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট) সঙ্কট, যা দেখা দেয় অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে সমষ্টিকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক (ম্যাক্রোইকোনমিক) ভারসা্ম্য ভীষণভাবে ক্ষুণ্ণ হওয়ায় এবং ক্রম-অবনতিপ্রাপ্ত বৈদেশিক ক্ষেত্রের কারণে। এই সমস্তই সরকারকে সার্বিক অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য প্ররোচিত করে এবং তারা উদারীকরণের যুগের সূচনা করে যা দেশের অর্থনৈতিক পরিচালনার ছাঁদটাকেই পালটে দেয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কাঠামোগত সংস্কার এবং আর্থিক ক্ষেত্রের সংস্কার লাগু করার কাজে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে চলে। ১৯৯০-এর দশক বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে উদারীকরণ, রাজস্ব ও সরকারী ব্যয়ে সমতা আনা এবং ধীরে ধীরে ঘাটতির মুদ্রায় স্বত রূপান্তরণ দূর করা; সরকারি ঋণপত্রের বাজারের বিকাশ; মুদ্রা, ঋণপত্র ও বিদেশি মুদ্রা বাজারগুলিকে আরো একীভূত করা; উদারীকরণ, ঋণদান পদ্ধতিতে উন্নতি সাধন এবং নিরাপত্তা এবং বিবেচনাপূর্ণ বিধি (প্রুডেন্সিয়াল নর্মস্) প্রয়োগের উপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় রূপান্তরণ ঘটানোর জন্য উল্লেখযোগ্য। সংস্কারের আওতায় বিভিন্ন ক্ষেত্র ঢুকে পড়ার ফলে কেবল মাত্র ভারতীয় অর্থনীতিতেই নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক পরিচালনার ক্ষেত্রেও সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আসে। এই সময়কালে, যখন বিপুল বিদেশি অর্থের অনুপ্রবেশ ঘটে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সফল হয়। অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে এবং আন্তর্জাতিক ঘটনাসমূহের প্রতিক্রিয়ার ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাংগঠনিক কাঠামোতেও পরিবর্তন দেখা দেয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রযুক্তিতে পরিবর্তন সাধন করে এবং নিজের কাজকর্ম দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত প্রণালী এবং পদ্ধতিগুলিকে সময়ানুগ করে তোলে। অল্পনা কিল্লাওয়ালা প্রেস বিজ্ঞপ্তি : 2013-2014/336
|